কলকাতা ভ্রমণ: বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার উপায় ও খরচ

কলকাতা, যা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের শহর কলকাতা প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কলকাতা ভ্রমণ এর উপায় এবং খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

Victoria Memorial Hall: কলকাতা ভ্রমণ

কলকাতা ভ্রমণের উপায়

সড়কপথে: বাস সার্ভিস

বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে কলকাতায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে। ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য ‘শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস’, দেশ ট্রাভেলস ও ‘গ্রিনলাইন’ এর মতো প্রাইভেট বাস কোম্পানিগুলির সার্ভিস চালু আছে। এছাড়াও, বিআরটিসি এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন যৌথভাবে বাস সার্ভিস চালু করেছে। এছাড়াও অন্যান্য বাস চলাচল করছে কিনা জানতে বাস কাউন্টার গুলোতে খোজ নিয়ে সঠিক এবং আপডেট তথ্য জেনে নিতে পারবেন। বাসে করে আপনি কলকাতায় মোটামুটি ১২-১৪ ঘণ্টায় পৌছাইতে পারবেন।

ঢাকা থেকে কলকাতা বাস সার্ভিস:

  • শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস: শ্যামলী ট্রাভেলস ঢাকার একটা বাস কমলাপুর ছেড়ে কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট এ যায়। আর একটা বাস আব্দুল্লাহপূর থেকে ছেড়ে কলকাতার করুণাময়ী বাস টার্মিনালে যায়। শ্যামলীর আরো বাস চালু আছে কিনা, সেটা জানার জন্য তাদের বাস কাউন্টারগুলোতে যোগাযোগ করুন।
  • দেশ ট্রাভেলস: দেশ ট্রাভেলস এর বাস কল্যানপূর ও আব্দুল্লাহপূর থেকে ছেড়ে কলকাতার দেশ ট্রাভেলস এর কাউন্টারে রেলওয়ে কলোনি, দক্ষিণেশ্বরে যায়।
  • বিআরটিসি ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস সার্ভিস: বিআরটিসির বাসগুলিও কমলাপুর থেকে ছাড়ে এবং কলকাতায় পৌঁছায়।

প্রতিনিয়ত অনেক নতুন বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে। কোন কোন বাস ঢাকা থেকে কলকাতা যায় সে সম্পর্কে জানতে নিজে খোঁজ করুন।

বাসের খরচ: এসি বাসে কলকাতা যাইতে আপনার ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হবে। তবে নন এসি বাসে ১০০০-১২০০ টাকা লাগতে পারে। (বাসের ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে, তাই নিজে চেক করুন)

রেলপথে:

ঢাকা থেকে কলকাতায় সরাসরি ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ নামের এই ট্রেনটি ঢাকা থেকে কলকাতায় যাত্রা করে।

ঢাকা থেকে কলকাতা ট্রেন সার্ভিস:

  • মৈত্রী এক্সপ্রেস: ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ে এবং কলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছায়। যাত্রার সময় সাধারণত ১০-১২ ঘণ্টা লাগে।

ট্রেনের খরচ: প্রথম শ্রেণি এসি কেবিন ৪৫০০-৫০০০ টাকা (বাংলাদেশি টাকা) এবং সাধারণ কেবিন ২০০০-২৫০০ টাকা। (ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে, তাই নিজে চেক করুন)

আকাশপথে:

ঢাকা থেকে কলকাতা বিমানযাত্রা সবচেয়ে দ্রুত এবং সুবিধাজনক উপায়। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সরাসরি ঢাকা থেকে কলকাতা ফ্লাইট পরিচালনা করে।

ঢাকা থেকে কলকাতা বিমান সার্ভিস:

  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
  • ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স
  • রিজেন্ট এয়ারওয়েজ

বিমানের খরচ: জনপ্রতি ভাড়া ৮০০০-১৫০০০ টাকা (ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে, তাই নিজে চেক করুন)।

কলকাতা ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থানসমূহ

কলকাতায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল:

১. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল:

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলকাতার অন্যতম আইকনিক স্থাপত্য, ব্রিটিশ ভারতের রাজকীয় ঐতিহ্য এবং শিল্পের মিশ্রণে নির্মিত একটি অনন্য স্মৃতিসৌধ। এটি ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল এবং ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চলুন এর ইতিহাস, স্থাপত্য এবং দর্শনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানি।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ইতিহাস

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ১৯২১ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯০১ সালে রানির মৃত্যুর পর লর্ড কার্জন, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয়, এই মেমোরিয়াল তৈরির পরিকল্পনা করেন। এটি একটি স্মারক হিসেবে নির্মিত হয় যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গৌরবময় ইতিহাস এবং রানির অবদান সম্পর্কে জানতে পারে।

স্থাপত্যশৈলী

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের স্থাপত্য অত্যন্ত সুন্দর এবং চিত্তাকর্ষক। এটি ইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণের শৈলীতে নির্মিত হয়েছে, যা ভারতীয়, পার্সি, ইসলামিক এবং ব্রিটিশ স্থাপত্যের মিশ্রণ। সাদা মার্বেলের এই মেমোরিয়ালটি দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর এবং এটি একটি সুবিশাল উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত।

প্রধান আকর্ষণসমূহ:

  1. সেন্ট্রাল হল: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কেন্দ্রীয় হলে রানি ভিক্টোরিয়ার বিশাল মূর্তি স্থাপিত আছে। এই হলে আরও অনেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত আছে।
  2. গ্যালারীসমূহ: মেমোরিয়ালের ভেতরে বিভিন্ন গ্যালারি রয়েছে যেখানে ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস, শিল্পকর্ম, মানচিত্র, ছবি এবং সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পোট্রেট প্রদর্শিত হয়।
  3. মেমোরিয়াল গার্ডেন: মেমোরিয়ালটির চারপাশে বিশাল আকারের বাগান রয়েছে, যা প্রায় ৬৪ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে। বাগানের মধ্যে রয়েছে ফোয়ারা, লেক এবং বিভিন্ন প্রকারের গাছপালা।
  4. অ্যালবার্ট হল: এই হলে ব্রিটিশ রাজবংশের ইতিহাস এবং রানির জীবন সম্পর্কিত বিভিন্ন চিত্রকর্ম এবং দলিলপত্র সংরক্ষিত আছে।

দর্শনার্থীদের জন্য তথ্য

প্রবেশ মূল্য:

  • ভারতীয় নাগরিকদের জন্য: ৫০ রুপি।
  • সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ রুপি।
  • বিদেশি পর্যটকদের জন্য: .৫০০ রুপি।

টিকিটের সর্বশেষ আপডেট দাম জানতে এখানে ক্লিক করুন। (ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর অফিসিয়াল ওতেবসাইট)

খোলা থাকার সময়:

  • মঙ্গলবার থেকে রবিবার: সকাল ১০:০০ থেকে সন্ধ্যা ৫:০০ পর্যন্ত।
  • সোমবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে।

কীভাবে পৌঁছাবেন: কলকাতার যেকোনো স্থান থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছানো সহজ। ট্যাক্সি, বাস, এবং কলকাতা মেট্রো রেল ব্যবহার করে সহজেই এখানে আসা যায়।

  • নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন: ময়দান মেট্রো স্টেশন।
  • নিকটবর্তী বাস স্ট্যান্ড: এক্সাইড মোড় এবং কুইন্স ওয়ে।

ভ্রমণের পরামর্শ:

  • সঠিক সময়: শীতকালে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণ সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে।
  • নিরাপত্তা: ভ্রমণের সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন এবং মূল্যবান সামগ্রী সাবধানে রাখুন।
  • স্থানীয় গাইড: ইতিহাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিতে পারেন।

২. হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজ, যা “রবীন্দ্র সেতু” নামেও পরিচিত, কলকাতার একটি আইকনিক স্থাপনা এবং প্রযুক্তিগত বিস্ময়। এটি হুগলি নদীর উপর নির্মিত একটি ক্যান্টিলিভার ব্রিজ, যা কলকাতার হাওড়া স্টেশন এবং কলকাতা শহরের মূল অংশকে সংযুক্ত করে। এটি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এবং পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাওড়া ব্রিজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিম্নরূপ:

নির্মাণ এবং ইতিহাস

নির্মাণ শুরু এবং উদ্বোধন:

  • হাওড়া ব্রিজের নির্মাণ শুরু হয় ১৯৩৬ সালে এবং এটি সম্পন্ন হয় ১৯৪২ সালে।
  • ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৩ সালে।

ইতিহাস:

  • হাওড়া ব্রিজের পরিকল্পনা ব্রিটিশ শাসনামলে করা হয় এবং এটি মূলত গঙ্গার উপর একটি ফেরি সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে নির্মিত হয়েছিল।
  • ব্রিজটি নির্মাণের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল, তাই এটি নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত ইস্পাত অধিকাংশই ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়।

স্থাপত্যশৈলী এবং কাঠামো

ক্যান্টিলিভার ব্রিজ:

  • হাওড়া ব্রিজ একটি ক্যান্টিলিভার ব্রিজ, যা কোনো পিলারের সাহায্য ছাড়াই দুই প্রান্ত থেকে নদীর উপর ঝুলে থাকে।
  • ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১৫০০ ফুট (৪৫৭ মিটার) এবং প্রস্থ ৭১ ফুট (২১ মিটার)।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • ব্রিজটি সম্পূর্ণরূপে ২৬,৫০০ টন ইস্পাত দিয়ে নির্মিত, যা এর দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
  • ব্রিজটি দিনে প্রায় ১০০,০০০ যানবাহন এবং ১৫০,০০০ পথচারীর চলাচল সহ্য করতে সক্ষম।

পর্যটন আকর্ষণ

হাওড়া ব্রিজ কলকাতার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। এর স্থাপত্যশৈলী, ইতিহাস এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। পর্যটকরা হাওড়া ব্রিজের কাছাকাছি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করতে পারেন।

দর্শনীয় স্থান ও কার্যক্রম:

  • ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটা: পর্যটকরা ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় কলকাতার ব্যস্ত জীবনযাত্রা এবং হুগলি নদীর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
  • ফটোগ্রাফি: হাওড়া ব্রিজের আশেপাশে বিভিন্ন কোণ থেকে ছবি তোলা যায়, যা একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
  • রিভার ক্রুজ: হুগলি নদীতে নৌকা ভ্রমণের সময় ব্রিজটির সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  • ঘাট এলাকা পরিদর্শন: হাওড়া ব্রিজের কাছে মল্লিক ঘাট ও ফুল মার্কেট একটি চমৎকার স্থান, যেখানে স্থানীয় জীবনের এক ঝলক দেখা যায়।

হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন আকর্ষণীয় স্থানসমূহ

হাওড়া স্টেশন: হাওড়া ব্রিজের ঠিক পাশে অবস্থিত হাওড়া স্টেশন ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও ব্যস্ত রেলওয়ে স্টেশন। এটি পর্যটকদের কলকাতার অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

বোটানিক্যাল গার্ডেন: হাওড়া ব্রিজ থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন, যা তার বিশাল বট গাছের জন্য বিখ্যাত।

বেলুর মঠ: স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় বেলুর মঠ হাওড়া ব্রিজ থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। এটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত।

রবীন্দ্র সেতু সংলগ্ন ময়দান: কলকাতার বিশাল ময়দান এলাকা, যা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড নামেও পরিচিত, হাওড়া ব্রিজ থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত। এটি বিভিন্ন খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের জন্য পরিচিত।

ভ্রমণের জন্য কিছু পরামর্শ

সঠিক সময় নির্বাচন:

  • হাওড়া ব্রিজে ভ্রমণের সেরা সময় সকাল বা সন্ধ্যা। এই সময়ে ব্রিজের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায় এবং মানুষের ভিড় কম থাকে।

সতর্কতা ও নিরাপত্তা:

  • ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং ট্রাফিকের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ব্যস্ত সময়ে ব্রিজের ওপর ফটোগ্রাফি করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

স্থানীয় সংস্কৃতি ও আচার:

  • হাওড়া ব্রিজ এবং এর আশেপাশের এলাকা ভ্রমণের সময় স্থানীয় সংস্কৃতি এবং আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

৩. দাকশিনেশ্বর কালী মন্দির

দাকশিনেশ্বর কালী মন্দির কলকাতার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় এবং পর্যটন আকর্ষণ। এটি হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এবং মন্দিরটি তার বিশাল আকার, ধর্মীয় গুরুত্ব এবং স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।

মন্দিরের ইতিহাস

দাকশিনেশ্বর কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। রাণী রাসমণি, একজন ধনী এবং প্রভাবশালী জমিদার এবং দানবীর, এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার পূর্বে রাণী রাসমণি একটি স্বপ্নে দেবী কালীর নির্দেশনা পান যেখানে তাকে নদীর তীরে একটি মন্দির নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। এই স্বপ্ন থেকেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার প্রেরণা আসে।

স্থাপত্যশৈলী

দাকশিনেশ্বর কালী মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী অসাধারণ এবং দর্শনীয়। এটি বাংলার নবকান্তির ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের উদাহরণ। মন্দিরটি তিন তলা উচ্চ এবং এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে প্রধান মন্দির যেখানে ভক্তরা দেবী কালীর পূজা করেন। মন্দিরের চারপাশে ১২টি শিব মন্দির রয়েছে, যা রাশমনির স্বপ্নের প্রতিফলন।

প্রধান মন্দির

প্রধান মন্দিরে দেবী কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। মূর্তিটি কৃষ্ণবর্ণ এবং দেবী কালীর ভয়াল রূপ প্রদর্শন করে। দেবী কালীর এই মূর্তিটি পূজা করার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত এখানে আসেন। মন্দিরের ভিতরে দর্শনার্থীরা পবিত্র আরতি এবং পূজা দেখতে পারেন।

কিভাবে পৌঁছাবেন

দাকশিনেশ্বর কালী মন্দিরে পৌঁছানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে:

১. সড়কপথে: কলকাতা শহরের যেকোনো স্থান থেকে ট্যাক্সি, ওলা/উবার, বা রিকশা নিয়ে সরাসরি দাকশিনেশ্বর মন্দিরে পৌঁছানো যায়।

২. রেলপথে: কলকাতার বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন থেকে দাকশিনেশ্বর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে আসা যায়। সেখান থেকে অটো বা রিকশায় করে মন্দিরে পৌঁছানো যায়।

৩. জলপথে: হুগলি নদী দিয়ে নৌকায় করে মন্দিরে পৌঁছানো যায়। অনেক পর্যটক বেলুড় মঠ থেকে নৌকায় করে দাকশিনেশ্বর কালী মন্দিরে আসেন।

মন্দির দর্শনের সময়সূচী

মন্দিরের সময়সূচী পরিবর্তিত হতে পারে তবে সাধারণত মন্দির প্রতিদিন খোলা থাকে। মন্দিরে প্রবেশের জন্য কোন ফি নেই। পূজা এবং দর্শনের নির্দিষ্ট সময়সূচী আছে যা মন্দিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা যেতে পারে।

পরামর্শ

  • সতর্কতা: মন্দিরে শ্রদ্ধার সাথে প্রবেশ করুন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন।
  • পোশাক: মন্দিরে প্রবেশের সময় শালীন পোশাক পরিধান করুন।
  • সময়: মন্দিরে ভিড়ের সময় এড়িয়ে সকাল বা সন্ধ্যায় আসা ভালো।
  • খাবার: মন্দির চত্বরেই খাবার পাওয়া যায়, তবে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসা ভালো।

৪. ইডেন গার্ডেন্স:

ইডেন গার্ডেন্স, যা কলকাতার হৃদয়ে অবস্থিত, ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে একটি। এটি শুধু একটি স্টেডিয়াম নয়, বরং ক্রিকেট ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে একটি তীর্থস্থান।

স্টেডিয়ামের ইতিহাস

ইডেন গার্ডেন্স ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের সবচেয়ে পুরনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে একটি। ব্রিটিশ শাসনের সময় এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছিল এবং সময়ের সাথে সাথে এটি ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছিল ইডেন পরিবার থেকে, যারা তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

স্থাপত্য এবং ধারণক্ষমতা

ইডেন গার্ডেন্সের স্থাপত্যশৈলী চমকপ্রদ এবং আধুনিক। ২০১১ সালে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে স্টেডিয়ামটি ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ৬৬,০০০, যা একসময়ে ১,০০,০০০ এরও বেশি ছিল।

খেলার পরিবেশ

ইডেন গার্ডেন্সের দর্শকরা তাদের উচ্ছ্বাস এবং সমর্থনের জন্য বিখ্যাত। এখানে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং উত্তেজনাপূর্ণ। ভারতের জাতীয় দল থেকে শুরু করে আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) পর্যন্ত সবাই এখানে খেলে এবং প্রতিটি ম্যাচে দর্শকদের উদ্দীপনা চরমে থাকে।

উল্লেখযোগ্য ম্যাচ ও মুহূর্ত

ইডেন গার্ডেন্সে অনেক ঐতিহাসিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০১ সালে ভারতের সাথে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ, যেখানে ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল, তা আজও স্মরণীয়। এছাড়াও, ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটিও এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পরিদর্শন ও ট্যুর

ইডেন গার্ডেন্স পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন ধরণের ট্যুর উপলব্ধ রয়েছে। সাধারণত, ম্যাচের দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ে স্টেডিয়ামটি পরিদর্শন করা যায়। ট্যুরের মাধ্যমে দর্শকরা ড্রেসিং রুম, প্রেস বক্স, এবং মাঠের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখতে পারেন।

পরিদর্শন সময়:

  • সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (ম্যাচের দিন ব্যতীত)।
  • প্রবেশ মূল্য: সাধারণত ৫০-১০০ রুপি (ভারতীয় টাকা), বিশেষ ট্যুরের ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে।

স্টেডিয়াম চত্বরে অন্যান্য আকর্ষণ

ইডেন গার্ডেন্সের চতুর্পার্শ্বে রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ইডেন গার্ডেন্স প্যাভিলিয়ন: একটি সুন্দর প্যাভিলিয়ন যা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
  • ইডেন গার্ডেন্স লেক: স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী একটি লেক, যেখানে ভ্রমণকারীরা নৌকাভ্রমণ করতে পারেন।
  • সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল: একটি বিখ্যাত গির্জা যা ইডেন গার্ডেন্সের নিকটে অবস্থিত।

প্রবেশ মূল্য: কোনো ম্যাচ না থাকলে ইডেন গার্ডেনে যাওয়ার জন্য কোনো এন্ট্রি ফি লাগে না। ম্যাচের দিনগুলিতে ও স্টেডিয়ামে আয়োজিত বিশেষ ইভেন্টগুলিতে প্রবেশের জন্য টিকিট কেনা লাগতে পারে।

৫. ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম:

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, যা ভারতীয় জাদুঘর নামেও পরিচিত, কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম জাদুঘর। এটি শুধু কলকাতা নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের গর্ব। এখানে রয়েছে বিরল সংগ্রহশালা, প্রাচীন মূর্তি, শিল্পকর্ম, জীবাশ্ম এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক উপকরণ। ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ভ্রমণ আপনাকে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দেবে।

ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের ইতিহাস

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল দ্বারা। এটি ভারতের প্রথম জাদুঘর এবং বিশ্বের প্রাচীনতম জাদুঘরগুলির মধ্যে একটি। স্যার উইলিয়াম জোন্স এবং নাথানিয়েল ওয়ালিচের প্রচেষ্টায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত কলকাতার সোসাইটি হাউসে এটি শুরু হয় এবং পরে ১৮৭৫ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।

জাদুঘরের বিভাগসমূহ

ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে, প্রতিটি বিভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা গ্যালারি। এই বিভাগগুলো হল:

১. আরকিয়োলজি (পুরাতত্ত্ব): এই বিভাগে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এখানে মহেঞ্জোদাড়ো এবং হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন, প্রাচীন মূর্তি, মুদ্রা এবং তাম্রলিপি দেখতে পাওয়া যায়।

২. আর্ট (শিল্প): এই বিভাগে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতীয় চিত্রকলা, ব্রোঞ্জের মূর্তি এবং টেক্সটাইলের নিদর্শন রয়েছে। তাঞ্জোর আর্ট, মুঘল আর্ট এবং রাজপুত আর্টের বিভিন্ন নিদর্শন এখানে প্রদর্শিত হয়।

৩. এন্থ্রোপলজি (নৃতত্ত্ব): নৃতত্ত্ব বিভাগের গ্যালারিতে ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, পোশাক, আসবাব এবং অন্যান্য উপকরণ প্রদর্শিত হয়। এখানে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি এবং জীবনযাপন সম্পর্কে জানা যায়।

৪. জিওলজি (ভূতত্ত্ব): এই বিভাগে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিলাখণ্ড, খনিজ এবং জীবাশ্মের সংগ্রহ। ডাইনোসরের জীবাশ্ম এবং অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক জীবের নমুনা এখানে দেখতে পাওয়া যায়।

৫. বোটানি (উদ্ভিদবিদ্যা): উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, গাছপালা এবং ঔষধি গাছের সংগ্রহ রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ঋতুর উদ্ভিদ এবং তাদের বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রদর্শিত হয়।

৬. জুলজি (প্রাণিবিদ্যা): প্রাণিবিদ্যা বিভাগে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর নমুনা, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ এবং মেরুদণ্ডহীন প্রাণীর সংগ্রহ রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং প্রাণীর জীবাশ্ম এখানে প্রদর্শিত হয়।

জাদুঘর দর্শনের সময়সূচি ও প্রবেশ মূল্য

দর্শনের সময়সূচি:

  • সোম থেকে শুক্র: সকাল ১০:০০ থেকে বিকাল ৫:০০ পর্যন্ত
  • শনিবার ও রবিবার: সকাল ১০:০০ থেকে বিকাল ৫:৩০ পর্যন্ত
  • সোমবার এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে

প্রবেশ মূল্য:

  • ভারতীয় নাগরিকদের জন্য: ৭৫ রুপি (প্রাপ্তবয়স্ক) এবং ২০ রুপি (১৮ বছরের নিচে)
  • বিদেশি নাগরিকদের জন্য: ৫০০ রুপি
  • ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য। টিকিটের বিস্তারিত

ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে পৌঁছানোর উপায়

কলকাতায় ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম শহরের প্রাণকেন্দ্রে চৌরঙ্গী রোডে অবস্থিত, যা সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য। আপনি নিচের বিভিন্ন উপায়ে জাদুঘরে পৌঁছাতে পারেন:

১. মেট্রো: পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন থেকে হেঁটে কয়েক মিনিটের পথ।

২. বাস: কলকাতার যেকোনো জায়গা থেকে চৌরঙ্গী রোডের বাসে চেপে সহজেই পৌঁছানো যায়।

৩. ট্যাক্সি/রিকশা: শহরের যেকোনো স্থান থেকে ট্যাক্সি বা অটো রিকশায় জাদুঘরে পৌঁছানো যায়।

পরিদর্শনের জন্য কিছু টিপস

১. প্রথমে পরিকল্পনা করুন: জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগ ও গ্যালারি পরিদর্শনের জন্য একটি পরিকল্পনা করে নিন, যাতে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারেন।

২. নোটবুক ও ক্যামেরা: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করার জন্য একটি নোটবুক এবং ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা সঙ্গে রাখতে পারেন। তবে ক্যামেরার জন্য আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।

৩. পর্যাপ্ত সময় নিন: প্রতিটি গ্যালারি এবং প্রদর্শনী ভালোভাবে দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন।

৪. গাইড বুক: জাদুঘর থেকে একটি গাইড বুক সংগ্রহ করতে পারেন, যা প্রদর্শনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেবে।

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ভ্রমণ আপনাকে ভারতের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করবে। এটি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান এবং এখানে ভ্রমণ করে আপনি ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হতে পারবেন।

৬. বেলুর মঠ:

বেলুর মঠ, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় এবং স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিষ্ঠিত আধ্যাত্মিক স্থান, কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এটি হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। বেলুর মঠে ভ্রমণ করতে চাইলে এটির ইতিহাস, স্থাপত্য, দর্শনীয় স্থান এবং পরিদর্শনের বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

বেলুর মঠের ইতিহাস

বেলুর মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৯৮ সালে বেলুর মঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মঠের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ১৯৩৮ সালে। এটি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য সমন্বয়, যা বিভিন্ন ধর্মের ঐক্যকে প্রতিফলিত করে।

স্থাপত্যশৈলী

বেলুর মঠের স্থাপত্যশৈলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মঠের প্রধান মন্দিরের নকশায় বিভিন্ন ধর্মের স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ দেখা যায়। এর প্রধান প্রবেশদ্বারটি বৌদ্ধ স্তূপের আদলে তৈরি, প্রধান মন্দিরটি মিশরীয় এবং ইউরোপীয় গথিক স্থাপত্যের সমন্বয়। মন্দিরের গম্বুজটি ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর অনুপ্রেরণায় তৈরি।

মঠের চারপাশের পরিবেশ অত্যন্ত প্রশান্ত ও মনোরম। বিশাল উদ্যান, জলাশয় এবং বিভিন্ন প্রকারের ফুলের বাগান মঠের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

পরিদর্শনের সময় ও তথ্য

প্রবেশ ফি: বেলুর মঠে প্রবেশের জন্য কোনো ফি লাগে না। তবে, অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে যা মঠের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে।

সময়সূচি:

  • প্রার্থনা ও পূজা: প্রতিদিন সকাল ৫.৩০ থেকে ৭.০০ এবং সন্ধ্যা ৫.০০ থেকে ৬.৩০
  • মন্দির দর্শন: গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সকাল ৬.০০ থেকে ১১.৩০ এবং বিকেল ৪.০০ থেকে ৭.০০। শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ৬.৩০ থেকে ১১.৩০ এবং বিকেল ৩.৩০ থেকে ৬.০০।
  • মিউজিয়াম: সকাল ৮.৩০ থেকে ১১.৩০ এবং বিকেল ৪.০০ থেকে ৬.০০।

বেলুর মঠে পৌঁছানোর উপায়

সড়কপথে: কলকাতার বিভিন্ন স্থান থেকে বেলুর মঠে সড়কপথে সহজেই পৌঁছানো যায়। ট্যাক্সি, উবার বা ওলা ক্যাব ব্যবহার করে যাতায়াত করা যায়। এছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস উপলব্ধ।

রেলপথে: বেলুর মঠের নিকটবর্তী রেলস্টেশন হল ‘বেলুড় স্টেশন’। হাওড়া থেকে ট্রেনে বেলুর স্টেশনে পৌঁছে রিকশা বা ট্যাক্সিতে করে মঠে পৌঁছানো যায়।

নৌপথে: হুগলি নদীর উপর ফেরি সার্ভিসও আছে। কলকাতার বিভিন্ন ঘাট থেকে বেলুর মঠের ঘাটে ফেরি চালু রয়েছে।

বেলুর মঠে ভ্রমণের জন্য কিছু পরামর্শ

  • ড্রেস কোড: মঠে প্রবেশের সময় শালীন পোশাক পরিধান করা উচিত। মঠের অভ্যন্তরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ।
  • আচার-অনুষ্ঠান: মঠে ভ্রমণের সময় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা উচিত এবং মঠের নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত।
  • স্মারক ও অনুদান: মঠের অভ্যন্তরে একটি স্মারক দোকান রয়েছে যেখানে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বই এবং স্মারক পাওয়া যায়। এছাড়াও, অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে যা মঠের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে।

৭. সায়েন্স সিটি:

কলকাতার সায়েন্স সিটি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম এবং আধুনিক বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি। এটি ১ জুলাই, ১৯৯৭ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং তারপর থেকেই এটি বিজ্ঞান প্রেমীদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। সায়েন্স সিটি কেবলমাত্র একটি বিজ্ঞান জাদুঘর নয়, এটি এমন একটি স্থান যেখানে শিক্ষামূলক কার্যক্রম, বিজ্ঞান প্রদর্শনী এবং ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়।

সায়েন্স সিটির মূল আকর্ষণসমূহ

১. ডাইনামোশন হল: ডাইনামোশন হলের মধ্যে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী রয়েছে যেখানে দর্শনার্থীরা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী হল:

  • রোলার কোস্টার সিমুলেটর: একটি ভার্চুয়াল রোলার কোস্টার যাত্রা যা দর্শকদের থ্রিল এবং উত্তেজনা প্রদান করে।
  • থ্রিডি থিয়েটার: একটি আধুনিক থ্রিডি থিয়েটার যেখানে বিভিন্ন শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক থ্রিডি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
  • মিরর মেজ: একটি আকর্ষণীয় মিরর মেজ যা দর্শকদের বিভ্রান্তি এবং মজা প্রদান করে।

২. স্পেস থিয়েটার: এটি একটি আধুনিক থিয়েটার যেখানে ডোম আকৃতির ছাদের উপর বিশেষ প্রদর্শনী এবং চলচ্চিত্র দেখানো হয়। এই থিয়েটারে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে মহাকাশ এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যচিত্র এবং প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়।

৩. এভিয়েশন গ্যালারি: এই গ্যালারিতে বিভিন্ন বিমান এবং এভিয়েশন সম্পর্কিত প্রদর্শনী রয়েছে যা দর্শকদের বিমান চলাচলের ইতিহাস এবং প্রযুক্তির বিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করে।

৪. অর্ডিটোরিয়াম: সায়েন্স সিটিতে একটি বড় অর্ডিটোরিয়াম রয়েছে যেখানে বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রদর্শনী, সেমিনার এবং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে শিক্ষামূলক বক্তৃতা, বিজ্ঞান প্রদর্শনী এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হয়।

৫. সায়েন্স পার্ক: সায়েন্স সিটির বাহিরে একটি বড় সায়েন্স পার্ক রয়েছে যেখানে বিভিন্ন আউটডোর বিজ্ঞান প্রদর্শনী এবং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই পার্কে রয়েছে সায়েন্স রাইড, বায়োডাইভার্সিটি গার্ডেন এবং ডাইনোসর কমপ্লেক্স।

৬. এনার্জি এডুকেশন পার্ক: এই পার্কে বিভিন্ন ধরনের শক্তি উত্পাদন এবং ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রদর্শনী এবং মডেল রয়েছে। এখানে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জলবিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে।

৭. এভোলিউশন পার্ক: এভোলিউশন পার্কে জীবাশ্ম এবং ডায়োরামা সহ বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে যা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের বিবর্তনের কাহিনী তুলে ধরে। এখানে বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক জীব এবং উদ্ভিদের মডেল প্রদর্শিত হয়।

সায়েন্স সিটির সময়সূচী ও প্রবেশ মূল্য

সময়সূচী: সায়েন্স সিটি প্রতিদিন সকাল ৯:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৮:০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিশেষ প্রদর্শনী এবং থিয়েটারের সময়সূচী ভিন্ন হতে পারে, তাই আগেই জেনে নেওয়া ভালো।

প্রবেশ মূল্য: প্রবেশ মূল্য ভিন্ন ভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণ প্রবেশ মূল্য সাধারণত ১২০ রুপি। বিশেষ প্রদর্শনী এবং থ্রিডি থিয়েটারের জন্য আলাদা টিকিট কিনতে হয়। টিকিটের মুল্য সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে ক্লিক করে দেখুন।

কিভাবে পৌঁছানো যাবে

স্থানীয় পরিবহন: সায়েন্স সিটি কলকাতার ইএম বাইপাস এলাকায় অবস্থিত, যা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা যেমন বাস, ট্যাক্সি এবং অটো রিকশা সহজলভ্য। নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন হল ‘বেলেগাছিয়া’ এবং সেখান থেকে অটো রিকশা বা ট্যাক্সি নিয়ে সায়েন্স সিটিতে পৌঁছানো যায়।

এয়ারপোর্ট থেকে: কলকাতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সায়েন্স সিটি প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে। ট্যাক্সি বা ক্যাব সার্ভিস ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছানো যায়।

রেলওয়ে স্টেশন থেকে: হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে সায়েন্স সিটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে ট্যাক্সি বা বাস ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছানো যায়।

ভ্রমণের কিছু টিপস

  • আগ্রিম টিকিট বুকিং: বিশেষ করে ছুটির দিনে বা ছুটির সময় সায়েন্স সিটি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে, তাই আগ্রিম টিকিট বুকিং করলে অপেক্ষা কম হবে।
  • সময় পরিকল্পনা: সায়েন্স সিটির সবকিছু দেখার জন্য পুরো দিন পরিকল্পনা করা ভালো। বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং কার্যক্রম উপভোগ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখতে হবে।
  • খাবার ও পানীয়: সায়েন্স সিটির ভেতরে বিভিন্ন খাবারের স্টল এবং ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। তবে নিজে থেকে কিছু খাবার এবং পানীয় সঙ্গে রাখতে পারেন আগে থেকেই।

কলকাতার সায়েন্স সিটি একটি শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা সব বয়সের মানুষের জন্য আকর্ষণীয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার পাশাপাশি, এটি একটি মজাদার এবং স্মরণীয় ভ্রমণের সুযোগ প্রদান করে।

৮. বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম (BITM) কলকাতার অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক জাদুঘর এবং শিক্ষামূলক কেন্দ্র। এই জাদুঘরটি মূলত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা এবং আগ্রহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ, এবং ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে।

জাদুঘরের ইতিহাস

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কলকাতার গুরাসদা দত্ত রোডে অবস্থিত এবং এটি ভারতের অন্যতম পুরাতন বৈজ্ঞানিক জাদুঘর। জাদুঘরটি বিড়লা পরিবারের উদ্যোগে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়েছিল।

জাদুঘরের বিভিন্ন প্রদর্শনী

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে বিভিন্ন ধরণের প্রদর্শনী রয়েছে যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন দিককে তুলে ধরে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. টেলিযোগাযোগ প্রদর্শনী: এই প্রদর্শনীতে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ এবং উন্নতি সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে। এখানে টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন এবং আধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মডেল প্রদর্শিত হয়।

২. ফিজিক্স গ্যালারি: ফিজিক্স গ্যালারিতে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় এবং নীতিমালা প্রদর্শিত হয়। এখানে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী রয়েছে যা পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব ও ধারণা বুঝতে সাহায্য করে।

৩. বায়োলজি গ্যালারি: বায়োলজি গ্যালারিতে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক প্রদর্শিত হয়। এখানে প্রাণীদের জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, এবং জীববিবর্তনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে।

৪. ম্যাথমেটিক্স গ্যালারি: গণিতের বিভিন্ন ধাঁধা, তত্ত্ব এবং গণনার প্রক্রিয়া নিয়ে এই গ্যালারিতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছাত্রছাত্রী এবং গণিতপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

৫. অটোমোবাইল গ্যালারি: এই গ্যালারিতে অটোমোবাইল প্রযুক্তি এবং এর ইতিহাস প্রদর্শিত হয়। বিভিন্ন মডেলের গাড়ি এবং তাদের ইঞ্জিন সংক্রান্ত তথ্য এখানে পাওয়া যায়।

৬. ইলেকট্রনিক্স গ্যালারি: ইলেকট্রনিক্স এবং এর ব্যবহার নিয়ে এই গ্যালারিতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং তাদের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে এখানে জানার সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষামূলক কার্যক্রম

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রম এবং ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়। এখানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ, ওয়ার্কশপ, এবং ডেমনস্ট্রেশন ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও, এখানে টেলিস্কোপের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে।

অন্যান্য আকর্ষণ

সায়েন্স শো: বিভিন্ন বিজ্ঞান শো এবং লাইভ ডেমনস্ট্রেশন এখানে অনুষ্ঠিত হয় যা দর্শকদের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও আগ্রহ সৃষ্টি করে।

তারা মন্ডল: তারা মন্ডলে রাতের আকাশের বিভিন্ন তারকা, গ্রহ এবং নক্ষত্রমণ্ডল দেখানো হয়। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী দর্শকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

সায়েন্স পার্ক: সায়েন্স পার্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মডেল এবং ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী রয়েছে যা দর্শকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

জাদুঘরের সময়সূচী এবং প্রবেশ মূল্য

সময়সূচী:

  • সোমবার থেকে শুক্রবার: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত
  • শনিবার, রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিন: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত

প্রবেশ মূল্য:

  • সাধারণ প্রবেশ: ১০-৪০ রুপি
  • বিশেষ প্রদর্শনী এবং ওয়ার্কশপের জন্য আলাদা টিকিট মূল্য। টিকিটের মূল্য সম্পর্কে বিস্তারিত

পরিদর্শনের জন্য পরামর্শ

  • প্রাথমিক পরিকল্পনা: জাদুঘর পরিদর্শনের আগে তাদের ওয়েবসাইট দেখে নিন যাতে বিশেষ প্রদর্শনী এবং ওয়ার্কশপ সম্পর্কে জানতে পারেন।
  • শিক্ষামূলক কার্যক্রম: ছাত্রছাত্রীদের জন্য জাদুঘরটি একটি চমৎকার শিক্ষা কেন্দ্র। স্কুল বা কলেজের গ্রুপ ট্যুরের জন্য আগাম বুকিং করতে পারেন।
  • খাবারের ব্যবস্থা: জাদুঘরের ভিতরে ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে যেখানে হালকা খাবার পাওয়া যায়।
  • পর্যাপ্ত সময় নিন: জাদুঘরের প্রতিটি গ্যালারি এবং প্রদর্শনী ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যান।

৯. রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম, যা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থিত, কলকাতার অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান। এটি বিশিষ্ট কবি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কাজকে উদযাপন এবং সংরক্ষণ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মিউজিয়ামটি ঠাকুরবাড়ি নামেও পরিচিত এবং এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত সংগ্রহ, শিল্পকর্ম এবং বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত রয়েছে।

মিউজিয়ামের অবস্থান

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতার উত্তরাংশে অবস্থিত। এটি ৬৭/১ বি, জোড়াসাঁকো, কলকাতা – ৭০০০০৭ ঠিকানায় অবস্থিত।

মিউজিয়ামের ইতিহাস

১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অংশ হিসেবে ঠাকুরবাড়িকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি রক্ষার্থে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। ঠাকুর পরিবারের বাড়ি এবং এখানে সংরক্ষিত সামগ্রীগুলি ঠাকুরের জীবন ও কর্মের মূল্যবান নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়।

প্রদর্শনী

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়ামে বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে যা ঠাকুরের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনীর তালিকা:

১. শিল্পকর্ম ও পেইন্টিং: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা চিত্রকর্ম এবং স্কেচগুলি এখানে প্রদর্শিত হয়। তার শিল্পকর্মগুলি তার সৃজনশীলতার নিদর্শন এবং বিভিন্ন শিল্পধারার প্রতি তার অনুরাগকে প্রতিফলিত করে।

২. পাণ্ডুলিপি ও চিঠিপত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র এবং ব্যক্তিগত নোটগুলি এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এটি তার সাহিত্যিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি উন্মোচন করে।

৩. ব্যক্তিগত সামগ্রী: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যক্তিগত সামগ্রী যেমন পোষাক, গহনা, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তু এখানে প্রদর্শিত হয়।

৪. ফটোগ্রাফি ও ভিডিও: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ এখানে প্রদর্শিত হয়। এতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোলা ছবি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মুহূর্তগুলি অন্তর্ভুক্ত।

মিউজিয়ামের সময়সূচী

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম সাধারণত মঙ্গলবার থেকে রবিবার খোলা থাকে। সোমবার এবং সরকারি ছুটির দিন মিউজিয়াম বন্ধ থাকে। খোলার সময়সীমা সাধারণত সকাল ১০:৩০ টা থেকে বিকেল ৫:০০ টা পর্যন্ত থাকে।

প্রবেশ মূল্য

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে যা ভারতীয় এবং বিদেশী দর্শকদের জন্য ভিন্ন। এছাড়াও শিক্ষার্থী এবং সাধারণ দর্শকদের জন্য আলাদা ফি নির্ধারিত আছে।

ভারতীয় দর্শকদের জন্য:

  • শারীরিক প্রতিবন্ধী দর্শক, পথশিশু এবং ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবেশ ফি নেই।
  • শিক্ষার্থীদের জন্য: ১০ টাকা
  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: ২০ টাকা

সার্ক দেশগুলোর দর্শকদের জন্য:

  • শিক্ষার্থীদের জন্য: ২০ টাকা
  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: ৩০ টাকা

অন্যান্য দেশের দর্শকদের জন্য:

  • শিক্ষার্থীদের জন্য: ১০০ টাকা
  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: ১৫০ টাকা

ফটোগ্রাফি চার্জ: ৫০ টাকা প্রতি ডিভাইস। ফটোগ্রাফি শুধুমাত্র মিউজিয়ামের বাইরে এবং প্রাঙ্গণে অনুমোদিত। মিউজিয়ামের ভিতরে ফটোগ্রাফি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

বিশেষ কার্যক্রম

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম বিভিন্ন বিশেষ প্রদর্শনী, কর্মশালা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, সাহিত্য এবং শিল্পকর্ম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার সুযোগ পাওয়া যায়।

পরিদর্শনের পরামর্শ

  • গাইডেড ট্যুর: মিউজিয়ামে গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে, যা মিউজিয়ামের প্রদর্শনীগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সহায়ক।
  • মিউজিয়াম শপ: মিউজিয়ামের একটি শপ রয়েছে, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই, স্যুভেনির এবং অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায়।
  • ছবি তোলা: মিউজিয়ামের অভ্যন্তরে ছবি তোলার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে, তাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলুন।

রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়াম পরিদর্শন একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কাজকে জানার সুযোগই দেয় না, বরং তার সময়ের সমাজ ও সংস্কৃতির একটি ঝলকও প্রদান করে।

৯. মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম

মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম কলকাতার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ, যা বিশেষ করে মোমের তৈরি বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মূর্তি প্রদর্শনের জন্য জনপ্রিয়। এখানে পর্যটকরা বিভিন্ন তারকা এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সাথে বাস্তবিক মূর্তির মাধ্যমে পরিচিত হতে পারেন।

অবস্থান ও সময়সূচি

অবস্থান: মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম কলকাতার নিউটাউন এলাকায় ইকো পার্কের কাছাকাছি অবস্থিত।

প্রবেশের সময়:

  • দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭:৩০টা
  • সোমবার: বন্ধ

প্রবেশ মূল্য

  • প্রাপ্তবয়স্ক: ২৫০ রুপি
  • শিশু (৩ বছরের নিচে): ফ্রি

অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেনা যায়। তবে কেনার পর টিকিট ক্যানসেল করতে চাইলে কোন টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।

প্রদর্শনীর বৈশিষ্ট্য

মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫২-৫৩টি মোমের মূর্তি প্রদর্শন করা হয়। প্রতিটি প্রদর্শনী বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সংক্ষিপ্ত জীবনীও প্রদর্শিত হয়। জাদুঘরটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত, যা মোমের মূর্তিগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

প্রধান ক্যাটাগরি ও উদাহরণ:

১. বলিউড:

  • শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত, শাহিদ কাপুর, কারিনা কাপুর

২. হলিউড:

  • লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, জনি ডেপ, টম ক্রুজ

৩. ক্রীড়া:

  • শচীন তেন্ডুলকার, লিওনেল মেসি, ডেভিড বেকহ্যাম, মহেন্দ্র সিং ধোনি

৪. সঙ্গীত:

  • মাইকেল জ্যাকসন, লতা মঙ্গেশকর, এ আর রহমান, এলভিস প্রেসলি

৫. ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব:

  • মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, বিবেকানন্দ, মাদার তেরেসা

৬. রাজনীতি:

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ড. এ পি জে আবদুল কালাম, ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

মিউজিয়ামের অভিজ্ঞতা

মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামে প্রদর্শিত প্রতিটি মূর্তি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা দর্শকদের বাস্তবতার অভিজ্ঞতা দেয়। মূর্তিগুলি তৈরি করার জন্য উচ্চমানের মোম এবং বাস্তবসম্মত চোখ ও চুল ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, মূর্তিগুলির পোশাক ও আনুষঙ্গিক উপকরণও খুবই মানানসই।

মিউজিয়ামের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য

ফটোগ্রাফি: মিউজিয়ামে দুটি ফটো গ্যালারি রয়েছে। প্রবেশপথের লবিটি ৬ষ্ঠ তলায় এবং তা নীল টাইলসে মোড়ানো, এবং বের হওয়ার লবিটি ৫ম তলায় এবং তা লাল টাইলসে মোড়ানো। এখানে পর্যটকরা মোমের মূর্তির সাথে ছবি তুলতে পারেন এবং এই মুহূর্তগুলি স্মরণীয় করে রাখতে পারেন।

স্মারক দোকান: মিউজিয়ামে একটি স্মারক দোকান রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন, পোস্টার এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী পাওয়া যায়।

ক্যাফে: মিউজিয়ামে একটি ক্যাফে রয়েছে যেখানে পর্যটকরা খাবার ও পানীয় উপভোগ করতে পারেন। এটি ভ্রমণের ক্লান্তি কাটিয়ে তুলতে সহায়ক।

পরিদর্শনের কিছু পরামর্শ

  • টিকিট আগে থেকে বুকিং: মিউজিয়ামের টিকিট আগে থেকে অনলাইনে বুকিং করলে ভিড় এড়ানো যায় এবং সময় বাঁচানো যায়।
  • পর্যাপ্ত সময় রাখা: মিউজিয়ামে প্রদর্শনীগুলো দেখতে এবং উপভোগ করতে পর্যাপ্ত সময় রাখা উচিত। সাধারণত ২-৩ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।
  • ব্যাগ ও বড় ক্যামেরা: মিউজিয়ামের ভিতরে বড় ব্যাগ এবং প্রফেশনাল ক্যামেরা নেওয়া নিষিদ্ধ, তাই সেগুলি বাহিরে রেখে আসা উচিত।
  • ছোট বাচ্চাদের জন্য: মিউজিয়ামে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে গেলে তাদের দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু মূর্তি এবং প্রদর্শনী ভঙ্গুর হতে পারে।

১০. নেহেরু চিলড্রেন্স জাদুঘর: এক ঝলক

নেহেরু চিলড্রেন্স জাদুঘর, যা কলকাতার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, শিশুদের শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রমের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। এখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী, কার্যক্রম এবং ইভেন্টের আয়োজন করা হয়, যা তাদের জ্ঞান এবং সৃজনশীলতাকে বিকাশে সহায়তা করে।

অবস্থান

ঠিকানা:
94/1, জওহরলাল নেহেরু রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ 700020, ভারত।

ইতিহাস এবং প্রতিষ্ঠা

নেহেরু চিলড্রেন্স জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। এটি শিশুদের জন্য জ্ঞানার্জনের একটি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এবং তাদের সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি এবং শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। জাদুঘরটি জওহরলাল নেহেরুর শিশুদের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা এবং স্নেহের একটি নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রধান আকর্ষণ

১. প্রদর্শনী এবং গ্যালারি: নেহেরু চিলড্রেন্স জাদুঘরে বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং গ্যালারি রয়েছে যেখানে শিশুদের জন্য বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু প্রদর্শিত হয়। এখানে বিজ্ঞান, গণিত, এবং ইতিহাসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষামূলক প্রদর্শনী রয়েছে যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

২. আর্ট এবং ক্র্যাফট ওয়ার্কশপ: শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য এখানে বিভিন্ন আর্ট এবং ক্র্যাফট ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়। এই ওয়ার্কশপগুলিতে অংশগ্রহণ করে শিশুরা তাদের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারে।

৩. পাপেট শো এবং থিয়েটার: নেহেরু চিলড্রেন্স জাদুঘরে নিয়মিত পাপেট শো এবং শিশুদের থিয়েটারের আয়োজন করা হয়। এই শোগুলি শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক এবং শিক্ষামূলক উভয়ই।

৪. শিক্ষামূলক কার্যক্রম: শিশুদের শিক্ষার জন্য জাদুঘরে বিভিন্ন কর্মশালা, আলোচনা সভা এবং প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। এগুলি শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়ায় এবং শিক্ষাকে মজাদার করে তোলে।

৫. লাইব্রেরি: জাদুঘরে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরণের বই পাওয়া যায়। শিশুদের জন্য উপযোগী বই থেকে শুরু করে শিক্ষকদের জন্য রেফারেন্স বইও এখানে রয়েছে।

বিশেষ ইভেন্ট এবং উত্সব

নেহেরু চিলড্রেন্স জাদুঘরে বিশেষ বিশেষ সময়ে বিভিন্ন ইভেন্ট এবং উত্সব পালন করা হয়। শিশু দিবস, জন্মদিন এবং বিশেষ দিনগুলিতে এখানে বিভিন্ন কার্যক্রম এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

১. শিশু দিবস: ১৪ নভেম্বর, জওহরলাল নেহেরুর জন্মদিন উপলক্ষে শিশু দিবস পালিত হয়। এই দিনে জাদুঘরে বিশেষ প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা এবং অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

২. গ্রীষ্মকালীন শিবির: গ্রীষ্মের ছুটিতে জাদুঘরে বিশেষ গ্রীষ্মকালীন শিবিরের আয়োজন করা হয় যেখানে শিশুরা বিভিন্ন সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে।

৩. শীতকালীন শিবির: শীতের ছুটিতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।

প্রবেশ মূল্য এবং সময়সূচী

প্রবেশ মূল্য:

  • ১৬ বছরের নিচে: ১০ রুপি।
  • ১৬ বছরের উপরে: ২০ রুপি।
  • বিশেষ প্রদর্শনীর জন্য আলাদা টিকিট প্রয়োজন হতে পারে।

সময়সূচী:

  • সকাল ১১:০০ টা থেকে বিকাল ৭:০০ টা পর্যন্ত।
  • জাদুঘরটি সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে।

পরিদর্শনের জন্য কিছু পরামর্শ

  • অগ্রিম বুকিং: বিশেষ ইভেন্ট বা ওয়ার্কশপের জন্য আগাম বুকিং করা ভালো।
  • পর্যাপ্ত সময় রাখুন: জাদুঘরের বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং কার্যক্রম উপভোগ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন।
  • পরিবারসহ যাত্রা: এটি একটি পারিবারিক ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান, তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যেতে পারেন।

১১. আশুতোষ মিউজিয়াম: ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান

আশুতোষ মিউজিয়াম, কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এবং বিখ্যাত জাদুঘর, সংস্কৃতি ও ইতিহাস প্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অবস্থিত এবং ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিউজিয়ামগুলির মধ্যে একটি।

প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস

আশুতোষ মিউজিয়াম ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে, যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। মিউজিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নামে, যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।

সংগ্রহ ও প্রদর্শনী

আশুতোষ মিউজিয়ামে বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবান সংগ্রহ সংরক্ষিত আছে। এখানে প্রধানত প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকর্ম, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পাণ্ডুলিপি এবং বিভিন্ন প্রাচীন সামগ্রী প্রদর্শিত হয়। মিউজিয়ামের উল্লেখযোগ্য সংগ্রহসমূহের মধ্যে রয়েছে:

১. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন: মিউজিয়ামে রয়েছে প্রাচীন ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন ব্রোঞ্জ মূর্তি, টেরাকোটা ফলক, প্রাচীন মুদ্রা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন সামগ্রী।

২. শিল্পকর্ম: প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ভারতের বিভিন্ন শিল্পকর্ম এখানে প্রদর্শিত হয়। পেইন্টিং, ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম মিউজিয়ামের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম।

৩. পাণ্ডুলিপি এবং গ্রন্থ: মিউজিয়ামে অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এবং গ্রন্থ রয়েছে, যা ভারতীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। সংস্কৃত, বাংলা এবং অন্যান্য ভাষায় লেখা পাণ্ডুলিপি এখানে সংরক্ষিত আছে।

৪. পাথরের ফলক এবং স্তম্ভ: প্রাচীন ভারতীয় পাথরের ফলক এবং স্তম্ভ, যা বিভিন্ন রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল, মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়। এগুলির মধ্যে কিছু ফলক এবং স্তম্ভে প্রাচীন লিপি এবং চিত্র রয়েছে।

মিউজিয়ামের বিন্যাস

আশুতোষ মিউজিয়ামের প্রদর্শনী হলগুলো অত্যন্ত সুসজ্জিত এবং সুন্দরভাবে সাজানো। প্রতিটি গ্যালারি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল বা সাংস্কৃতিক ধারার উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন।

শিক্ষা ও গবেষণা

আশুতোষ মিউজিয়াম শুধু প্রদর্শনীর জন্যই নয়, শিক্ষাবিদ এবং গবেষকদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মশালা, সেমিনার এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মিউজিয়ামের সংগ্রহগুলি গবেষকদের জন্য মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে এবং ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ প্রদান করে।

ভ্রমণ তথ্য

লোকেশন: আশুতোষ মিউজিয়াম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত। সঠিক ঠিকানা হল ৮৭/১, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

প্রবেশ মূল্য এবং সময়সূচী:

  • মিউজিয়ামটি সাধারণত সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পরিচালনা ও সেবা:

  • মিউজিয়ামে পর্যটকদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে।
  • মিউজিয়ামের ভিতরে ফটোগ্রাফি সাধারণত অনুমোদিত নয়, তাই ফটোগ্রাফি নীতিমালা সম্পর্কে আগাম জেনে নেওয়া উচিত।

আশুতোষ মিউজিয়াম ভ্রমণের সময় কিছু পরামর্শ

  • সময়মত পৌঁছান: মিউজিয়ামের প্রদর্শনী ঘুরে দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আসুন।
  • গাইড বুক করুন: মিউজিয়ামের প্রদর্শনীগুলি ভালভাবে বোঝার জন্য গাইডেড ট্যুর নিতে পারেন।
  • নোট নিন: মিউজিয়ামের প্রদর্শনী সম্পর্কে নোট নিন, যা পরবর্তীতে কাজে আসতে পারে।
  • স্থানীয় নিয়ম মেনে চলুন: মিউজিয়ামের নিয়ম-কানুন মেনে চলুন এবং প্রদর্শনীগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।

১২. আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন

কলকাতার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন, যা সাধারণত শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত, ভারতের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম উদ্যানগুলির মধ্যে একটি। এটি হাওড়া জেলার শিবপুর এলাকায় অবস্থিত এবং হুগলি নদীর তীরে বিস্তৃত। ২৭৩ একর জায়গার উপর বিস্তৃত এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিশেষত্ব

বৃহত্তম বটগাছ: বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ হল একটি বিশাল বটগাছ, যা “দ্য গ্রেট ব্যানিয়ান ট্রি” নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ছায়াবিস্তৃত বৃক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়। গাছটির মূল কান্ড মূলত ১৯২৫ সালে মাটিতে আঘাত পেয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তবে এর অসংখ্য শাখা মাটি স্পর্শ করে এবং নতুন মূলের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। বর্তমানে গাছটির চারপাশের বিস্তৃতি প্রায় ৩.৫ একর।

উদ্ভিদের বৈচিত্র্য: বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রায় ১২,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ, ফুল, বন্য উদ্ভিদ এবং ঔষধি গাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, পাম, বোল্ড এবং অন্যান্য গাছের সংগ্রহ বোটানিক্যাল গার্ডেনকে বিশেষ করে তুলেছে।

উদ্যানের বিভিন্ন অংশ: উদ্যানটি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত এবং প্রতিটি অংশে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। উদ্যানের প্রধান অংশগুলি হল:

  • পাম গার্ডেন
  • ক্যাকটাস হাউস
  • ফার্ন হাউস
  • লিলি পুল
  • গ্রিন হাউস

প্রাণীজগৎ: বোটানিক্যাল গার্ডেন শুধুমাত্র উদ্ভিদের জন্যই নয়, বিভিন্ন প্রাণীর জন্যও পরিচিত। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, প্রজাপতি এবং ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়।

দর্শনীয় স্থান

পাম গার্ডেন: পাম গার্ডেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাম গাছ দেখা যায়, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

গ্রেট লেক: উদ্যানের মধ্যে একটি বড় লেক রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ এবং পাখি পাওয়া যায়। এখানে বোটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে যা দর্শকদের আরও আনন্দ দেয়।

অর্কিড হাউস: অর্কিড হাউসে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড ফুল দেখা যায়। অর্কিড প্রেমীদের জন্য এটি একটি স্বর্গরাজ্য।

গ্রীন হাউস: গ্রীন হাউসে বিভিন্ন প্রজাতির ট্রপিক্যাল গাছপালা দেখা যায়। এখানে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ এবং বিরল উদ্ভিদ পাওয়া যায়।

বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাতায়াত এবং প্রবেশ মূল্য

স্থান: শিবপুর, হাওড়া, কলকাতা

যাতায়াত: কলকাতার যেকোনো স্থান থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন সহজেই পৌঁছানো যায়। হাওড়া স্টেশন থেকে অটো বা ট্যাক্সি করে উদ্যান পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। এছাড়া কলকাতা মেট্রো বা বাস ব্যবহার করেও উদ্যান পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব।

প্রবেশ মূল্য: বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি

  • ইন্ডিয়ান নাগরিকদের জন্য ১০ রুপি
  • বিদেশী ট্যুরিস্টদের জন্য ১০০ রুপি
  • ক্যামেরার জন্য ২০ রুপি

ভ্রমণের পরামর্শ

  • খোলার সময়: সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে বিশেষ দিন বা উৎসবের সময় খোলার সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
  • খাবার ও পানীয়: উদ্যানের ভিতরে কিছু খাদ্য ও পানীয় স্টল রয়েছে। তবে নিজে কিছু খাবার এবং পানীয় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো।
  • পোশাক: হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। হেঁটে ঘোরার জন্য আরামদায়ক জুতো পড়ুন।
  • ক্যামেরা: উদ্যানের সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করতে চাইলে ক্যামেরা নিয়ে আসতে পারেন। তবে ক্যামেরার জন্য আলাদা ফি প্রযোজ্য হতে পারে।

১৩. মার্কেট এবং শপিং মল:

কলকাতা ভ্রমণের সময় মার্কেট এবং শপিং মলগুলোতে যাওয়া একটি আবশ্যকীয় কাজ। এই শহরে বিভিন্ন ধরণের মার্কেট এবং মল রয়েছে, যা পর্যটকদের এবং স্থানীয়দের জন্য কেনাকাটার একটি জনপ্রিয় স্থান। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য মার্কেট এবং শপিং মল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

জনপ্রিয় মার্কেটসমূহ

১. নিউ মার্কেট: নিউ মার্কেট, যা সির স্টুয়ার্ট হগ মার্কেট নামেও পরিচিত, কলকাতার সবচেয়ে পুরাতন এবং বিখ্যাত বাজারগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে ২০০০টিরও বেশি দোকান নিয়ে গঠিত।

বাজারের বৈশিষ্ট্য:

  • বিভিন্ন ধরণের পোশাক, জুয়েলারি, বই, খাদ্যপণ্য এবং হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে।
  • চুক্তি ভিত্তিক ক্রয় বিক্রয় এখানে খুবই জনপ্রিয়।
  • এখানে কিছু বিখ্যাত খাদ্য ও মিষ্টির দোকান রয়েছে, যেমন নাহুমস, যা বিখ্যাত তাদের কেক এবং পেস্ট্রির জন্য।

২. গড়িয়াহাট মার্কেট: গড়িয়াহাট কলকাতার অন্যতম প্রধান বাজার এলাকা। এখানে বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী পাওয়া যায় এবং স্থানীয়দের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শপিং কেন্দ্র।

বাজারের বৈশিষ্ট্য:

  • পোশাক, গয়না, হস্তশিল্প, ইলেকট্রনিক্স এবং গৃহস্থালির সামগ্রী পাওয়া যায়।
  • গড়িয়াহাট ফ্লাইওভারের নীচে সড়কপথের পাশে অনেক ছোট ছোট দোকান রয়েছে যেখানে চুক্তির মাধ্যমে কেনাকাটা করা যায়।
  • রাস্তার খাবার এখানে খুবই জনপ্রিয়, বিশেষ করে ফুচকা, ঘুগনি এবং চাউমিন।

৩. এসপ্ল্যানেড: এসপ্ল্যানেড এলাকা কলকাতার সবচেয়ে ব্যস্ত এবং প্রাণবন্ত মার্কেট এলাকাগুলির মধ্যে একটি। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এখানে বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স এবং ছোট দোকানগুলো পাশাপাশি আছে।

বাজারের বৈশিষ্ট্য:

  • নিউ মার্কেটের কাছাকাছি অবস্থিত, তাই দুই স্থান একসঙ্গে ঘুরে দেখা যায়।
  • পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, জুতো এবং গৃহস্থালির সামগ্রী কেনার জন্য জনপ্রিয়।

৪. হাতিবাগান মার্কেট: হাতিবাগান কলকাতার উত্তরাংশে অবস্থিত একটি বিখ্যাত বাজার এলাকা। এটি স্থানীয়দের জন্য জনপ্রিয় একটি শপিং গন্তব্য।

বাজারের বৈশিষ্ট্য:

  • সাশ্রয়ী মূল্যে পোশাক, শাড়ি, গয়না এবং ইলেকট্রনিক্স পাওয়া যায়।
  • হাতে তৈরি এবং ট্র্যাডিশনাল পোশাকের জন্য বিখ্যাত।

জনপ্রিয় শপিং মলসমূহ

১. সাউথ সিটি মল: সাউথ সিটি মল কলকাতার অন্যতম বৃহত্তম এবং আধুনিক শপিং মল। এটি প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে অবস্থিত এবং অত্যাধুনিক সুবিধা নিয়ে গঠিত।

মলের বৈশিষ্ট্য:

  • বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে।
  • মলের ভিতরে একটি বড় ফুড কোর্ট এবং বিভিন্ন রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়।
  • বিনোদনের জন্য একটি মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল রয়েছে।

২. অ্যাক্রোপলিস মল: এই মলটি কলকাতার রাজডাঙ্গা মেইন রোডে অবস্থিত এবং আধুনিক শপিং ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত।

মলের বৈশিষ্ট্য:

  • বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক, জুতো, গয়না এবং ইলেকট্রনিক্সের দোকান রয়েছে।
  • একটি বড় ফুড কোর্ট এবং মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল রয়েছে।
  • মলের ভিতরে বিভিন্ন সেলুন এবং স্পা পরিষেবা পাওয়া যায়।

৩. সিটি সেন্টার (সল্ট লেক এবং নিউটাউন): সিটি সেন্টার মল কলকাতার সল্ট লেক এবং নিউটাউন এলাকায় অবস্থিত দুটি জনপ্রিয় শপিং মল।

মলের বৈশিষ্ট্য:

  • এখানে ব্র্যান্ডেড পোশাক, জুতো, গয়না এবং ইলেকট্রনিক্সের দোকান রয়েছে।
  • বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান এবং ফুড কোর্ট রয়েছে।
  • শিশুদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রম এবং খেলার জায়গা রয়েছে।

৪. কসমস মল: কসমস মল সেক্টর ৫, সল্ট লেক এলাকায় অবস্থিত এবং এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান এবং বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।

মলের বৈশিষ্ট্য:

  • বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক, জুতো এবং ইলেকট্রনিক্সের দোকান।
  • ফুড কোর্ট এবং বিভিন্ন ধরণের রেস্তোরাঁ।
  • একটি মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল।

৫. পি সি চন্দ্র গার্ডেন মল: এই মলটি কলকাতার বাইপাস এলাকায় অবস্থিত এবং আধুনিক শপিং ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত।

মলের বৈশিষ্ট্য:

  • ব্র্যান্ডেড পোশাক, গয়না এবং ইলেকট্রনিক্সের দোকান।
  • ফুড কোর্ট এবং বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরাঁ।
  • বড় ইভেন্ট এবং বিবাহের জন্য ভেন্যু।

কলকাতায় কেনাকাটা করার সময় কিছু পরামর্শ

  • চুক্তি করা: অনেক মার্কেটে চুক্তি করা যায়, তাই দাম নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
  • স্থানীয় মুদ্রা: কেনাকাটার সময় স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করা সহজ হয়। অধিকাংশ দোকানে কার্ড গ্রহণ করা হয়, তবে কিছু ছোট দোকানে শুধুমাত্র নগদ অর্থ গ্রহণ করা হয়।
  • ব্যাগ এবং পানীয়: বড় মার্কেটে বা মলে ঘোরার সময় একটি ব্যাগ এবং পানীয় জল সঙ্গে রাখুন।
  • বিশেষ উৎসবের সময়: পুজো, ক্রিসমাস, এবং অন্যান্য উৎসবের সময় বিশেষ ডিসকাউন্ট এবং অফার পাওয়া যায়, তাই সেই সময়ে কেনাকাটা করার চেষ্টা করুন।

কলকাতায় ভ্রমণের জন্য কিছু পরামর্শ

মুদ্রা বিনিময়: কলকাতায় মুদ্রা বিনিময় সুবিধা সহজলভ্য। তবে বাংলাদেশ থেকে কিছু ভারতীয় রুপি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো।

যোগাযোগ ব্যবস্থা: কলকাতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। মেট্রো, বাস, ট্যাক্সি এবং রিকশা সহজলভ্য।

খাবার ও থাকার ব্যবস্থা: কলকাতায় বিভিন্ন ধরণের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাজেট অনুযায়ী হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট বেছে নেওয়া সম্ভব। কিছু জনপ্রিয় স্থান হল পিটার ক্যাট, ফ্লুরিস, এবং ভীম নাগের মিষ্টির দোকান।

স্থানীয় সংস্কৃতি: কলকাতায় ভ্রমণকালে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। বিশেষ করে দুর্গাপূজা এবং পয়লা বৈশাখের সময় শহরের বিশেষ আকর্ষণ থাকে।

কলকাতায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ও খরচ

কলকাতায় থাকার এবং খাওয়ার জন্য প্রচুর অপশন রয়েছে। আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী আপনি যেকোনো একটি ব্যবস্থা বেছে নিতে পারেন। নিচে বিস্তারিতভাবে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা এবং খরচ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

থাকার ব্যবস্থা

১. বাজেট হোটেল

কলকাতায় অনেক বাজেট হোটেল রয়েছে যা সাশ্রয়ী মূল্যে পরিষেবা প্রদান করে। সাধারণত এসব হোটেলগুলোতে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা থাকে, যেমন ফ্রি ওয়াইফাই, টিভি, এয়ার কন্ডিশনিং ইত্যাদি।

  • খরচ: প্রতিরাত ১০০০-৩০০০ টাকা।
  • অবস্থান: প্রধানত নিউ মার্কেট, সল্টলেক, এবং হাওড়া এলাকায় বেশি পাওয়া যায়।

২. মধ্যম মানের হোটেল

যারা একটু আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে চান তাদের জন্য মধ্যম মানের হোটেলগুলো ভালো অপশন হতে পারে। এসব হোটেলগুলোতে সাধারণত রুম সার্ভিস, রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য সুবিধা থাকে।

  • খরচ: প্রতিরাত ৩০০০-৬০০০ টাকা।
  • অবস্থান: পার্ক স্ট্রিট, রাসবিহারী এভিনিউ, এবং সিটি সেন্টার এলাকায় বেশি পাওয়া যায়।

৩. বিলাসবহুল হোটেল

কলকাতায় অনেক বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে যা পাঁচ তারকা মানের সেবা প্রদান করে। এসব হোটেলে আপনি সুইমিং পুল, জিম, স্পা, এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম সুবিধা পাবেন।

  • খরচ: প্রতিরাত ৬০০০ টাকার উপরে।
  • অবস্থান: পার্ক স্ট্রিট, এলগিন রোড, এবং দক্ষিণ কলকাতায় বেশি পাওয়া যায়।

৪. গেস্ট হাউস এবং হোমস্টে

যারা একটু নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চান তাদের জন্য গেস্ট হাউস এবং হোমস্টে ভালো বিকল্প হতে পারে। এখানে আপনি বাড়ির মত পরিবেশ পাবেন।

  • খরচ: প্রতিরাত ১০০০-২৫০০ টাকা।
  • অবস্থান: সল্টলেক, বালিগঞ্জ, এবং টালিগঞ্জ এলাকায় বেশি পাওয়া যায়।

খাওয়ার ব্যবস্থা

১. স্ট্রিট ফুড

কলকাতার স্ট্রিট ফুড বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। ফুচকা, কাচুরি, ঘুগনি, চাউমিন ইত্যাদি রাস্তায় সহজেই পাওয়া যায়।

  • খরচ: প্রতিদিন ২০০-৫০০ টাকা।

২. স্থানীয় রেস্টুরেন্ট

স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে বাঙালি খাবার সহ বিভিন্ন প্রকার খাবার পাওয়া যায়। এখানে মাছের ঝোল, মটন বিরিয়ানি, এবং মিষ্টি (রসগোল্লা, সন্দেশ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

  • খরচ: প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা।

৩. মধ্যম মানের রেস্টুরেন্ট

মধ্যম মানের রেস্টুরেন্টগুলোতে ভারতীয়, চীনা, থাই এবং কন্টিনেন্টাল খাবার পাওয়া যায়। এসব রেস্টুরেন্টে আপনি সপরিবারে খেতে যেতে পারেন।

  • খরচ: প্রতিদিন ১০০০-২০০০ টাকা।

৪. বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট

কলকাতার বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এসব রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের কুইজিন পাওয়া যায়।

  • খরচ: প্রতিদিন ২০০০ টাকার উপরে।

কলকাতা ভ্রমণ বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য একটি সহজ এবং স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ভ্রমণ আরও উপভোগ্য করে তোলা সম্ভব। একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বের হওয়া উচিত।